Wednesday, May 22, 2024

আনোয়ারুলকে হত্যা করা হয় পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে

 ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে (আনার) হত্যার জন্য ঘাতকদের সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। সে অনুযায়ী আনোয়ারুল ১২ মে কলকাতা যাওয়ার পরদিনই তাঁকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা গেছে বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

৫৬ বছর বয়সী আনোয়ারুল আজিম কলকাতায় গিয়ে পূর্বপরিচিত গোপাল বিশ্বাস নামের একজনের বাসায় উঠেছিলেন। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে ওই বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার জানান, আনোয়ারুল আজীম কলকাতায় খুন হয়েছেন। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশিরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশে সৈয়দ আমানুল্লাহ, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিন নামের এক ব্যক্তির নাম এসেছে। কলকাতার নিউ টাউনে যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়, সেটি এই আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামানের ছোট ভাই।

ঢাকা ও কলকাতার পুলিশ জানায়, আনোয়ারুল আজীম ১৩ মে দুপুরে গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বেরিয়ে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে যান। সেখানেই হত্যা করা হয় তাঁকে। তাঁর নিখোঁজের ঘটনায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস। নিখোঁজের তদন্ত করতে গিয়ে কলকাতার পুলিশ তথ্য পায়, ওই ফ্ল্যাটে সৈয়দ আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি রহমান নামের দুই ব্যক্তিও ছিলেন। এই তথ্যের সূত্র ধরে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ফয়সাল আলী ওরফে সাজি নামে আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।





সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আমানুল্লাহ। তাঁর গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নে। তিনি একসময় চরমপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গণেশ নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে যশোরের অভয়নগর থানার এক মামলায় আমানুল্লাহ সাত বছর (১৯৯১-৯৭) জেল খাটেন। ইমান আলী নামের আরেক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন তিনি।

তবে চরমপন্থীদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র বলছে, আমানুল্লাহ নামে খুলনায় একজন সন্ত্রাসী আছেন যিনি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান শিমুল ভূঁইয়ার অন্যতম সহযোগী ছিলেন। কিন্তু সাজা খাটার যে বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে শিমুল ভূঁইয়াই নিজেকে আমানুল্লাহ বলে পরিচয় দিচ্ছেন।গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আমানুল্লাহ পরিচয়দানকারী ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে খুনের জন্য আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনের সঙ্গে তাঁর পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি হয়।

পুলিশ জানতে পারে, আক্তারুজ্জামান ও আনোয়ারুল আজীম পুরানো বন্ধু। আক্তারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। ঢাকার গুলশানে তাঁর বাসা রয়েছে। তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে তাঁর বাসা।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কলকাতার ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার সময় আক্তারুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছিলেন; যা ভাড়ার চুক্তিপত্রেও উল্লেখ আছে। আক্তারুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ খুঁজছে। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি গত সোমবার ঢাকা থেকে একটি ফ্লাইটে দিল্লি হয়ে কাঠমান্ডু চলে গেছেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, স্বর্ণ চোরাচালানের আন্তর্দেশীয় চক্রের দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিতভাবে আনোয়ারুলকে ভারতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Share:

0 comments:

Post a Comment

Click here

Blog Archive

NEWS

Recent Posts

Unordered List

Definition List