বিশ্বের নামীদামি প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ইএসজির (এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স) বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এর ব্যবহার বাড়ানোয় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সে জন্য দেশের বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোতে ইএসজি রিপোর্টিং ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ইএসজি (এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স) কমপ্লায়েন্সের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় আজ ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ এসব কথা বলেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান ও বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) মহাপরিচালক মু. আনোয়ারুল আলম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। খবর বিজ্ঞপ্তি ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (ইএসআরএম)’ বিষয়ক নীতিমালা প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ‘ইএসজি রিপোটিং’-এর অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করেছে। এটা ইতিবাচক। তাঁর মত, ইএসজি বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডার্ড ফ্রেমওয়ার্ক বা প্রমিত কাঠামো তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া শিল্পনীতি ও এসএমই নীতিমালায় ইএসজি কমপ্লায়েন্স অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান বলেন, প্রতিটি খাতেই কমপ্লায়েন্স অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে থাকে। তিনি আরও বলেন, পরিবেশগত কিংবা সামাজিক কমপ্লায়েন্স প্রতিপালনে সবাইকে পৃথকভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ২০১৬-২০২২ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ১৭টি পণ্যের জিআই দেওয়া হয়েছে। তবে ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৪টি পণ্যের জিআই সনদ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে; এ ছাড়া ৩০টি পণ্যের জিআই প্রদানের প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) মহাপরিচালক মু. আনোয়ারুল আলম বলেন, বাংলাদেশে স্মার্ট অর্থনীতির রূপান্তরে রপ্তানি বাড়াতে হবে; এর সঙ্গে ইএসজিতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের বিকল্প নেই। শিল্পকারখানার ইএসজির রিপোর্টিংয়ের আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ল্যাবরেটরিগুলোর মানোন্নয়নে জোর দেন তিনি।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিডোর আবাসিক প্রতিনিধি জাকি উজ্জামান। তিনি বলেন, ১৯৯০-এর দশকে বৈশ্বিকভাবে ইএসজি চালু হয়েছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কোম্পানির ঝুঁকি কমিয়ে মুনাফা অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু এলডিসি উত্তরণের পথে আছে, সেহেতু ইএসজি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে কিছু বাংলাদেশি কোম্পানি ইএসজি কমপ্লায়েন্স রিপোর্টিং বাস্তবায়ন করেছে। ইএসজি বাস্তবায়নে পরিবেশগত তথ্যাদি সংরক্ষণে তিনি জোরারোপ করেন। এ ছাড়া ইএসজি কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে দক্ষতা বাড়ানোয় গুরুত্বারোপ করেন তিনি; সেই সঙ্গে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেন।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবসা ব্যবস্থাপক ইয়াসমিন আক্তার, শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. সলিম উল্লাহ, ইকোটেক্স লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ বিন কাসেম ও যুক্তরাজ্যের লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। আলোচকেরা ইএসজি কমপ্লায়েন্স–বিষয়ক জনসচেতনতা বাড়ানো ও বাস্তবায়নে নীতি সহায়তা দেওয়া, ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় হ্রাস, চৌকসভাবে শাসন পরিচালনা, জিআইএসের মনিটরিং ও রিপোর্টিং সিস্টেম প্রবর্তন—এসব বিষয়ে জোর দেন। ইএসজি কমপ্লায়েন্সের জন্য সমন্বিত উদ্যোগের পাশাপাশি আইনের শাসন নিশ্চিত করায় জোর দেন বক্তারা।
ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা আলোচনা সভায় যোগ দেন।
0 comments:
Post a Comment