Thursday, May 23, 2024

যক্ষ্মা প্রতিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড

 বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ নতুনভাবে বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে বছরে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ মারা যায়। অর্থাৎ যক্ষ্মায় দৈনিক মারা যায় প্রায় ১১৫ জন। এ পরিস্থিতিতে যক্ষ্মা প্রতিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড ২০২৪।

যক্ষ্মার বিস্তার রোধ ও স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পরিচালনায় প্রথম আলো এই স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের আয়োজন করেছে। এতে দেশের ১২টি জেলার তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কুইজসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা অলিম্পিয়াড পরিচালনায় যুক্ত থাকবেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। চলতি বছরই এ অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে। দিনক্ষণ পরে জানানো হবে।

স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আইসিডিডিআরবির ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক ফেরদৌসী কাদরী বলেন, যক্ষ্মা প্রতিরোধে এখনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে টিকা আবিষ্কারের আগেই এ রোগের বিস্তার কমিয়ে আনতে হবে। বছরে ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু কোনো সাধারণ বিষয় নয়। এখনো শিশুদের যক্ষ্মা সেভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর টিবি) বিরাট দুশ্চিন্তার বিষয়।

স্বনামধন্য এ গবেষক আরও বলেন, যক্ষ্মার মতো রোগ প্রতিরোধের বিষয়গুলোকে পিছিয়ে দেয় কুসংস্কার। স্কুলের শিশুদের অংশগ্রহণে স্বাস্থ্যবিষয়ক এই অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে যক্ষ্মা রোগের বিস্তার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর (টিবি-এল অ্যান্ড এএসপি) মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই, বর্তমানে এ কথা আর প্রযোজ্য নয়। সরকারিভাবে বিনা মূল্যে যক্ষ্মার চিকিৎসা হচ্ছে। শুরুতে যক্ষ্মা শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করা গেলে যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব।

মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, তবে এ রোগ নিয়ে এখনো ট্যাবু, স্টিগমা বা কুসংস্কার ও বৈষম্য আছে। করোনা, ডেঙ্গু হলে সবাই তা বলছেন, কিন্তু কারও যক্ষ্মা হলে তা গোপন করছেন। অবিবাহিত মেয়েদের হলে অভিভাবকেরা মেয়ের বিয়ে হবে কি না, তা নিয়ে ভয়ে থাকেন। গৃহকর্মী, পোশাকশিল্পের কর্মীদের যক্ষ্মা হলে কাজ থেকে ছাঁটাই করা হয়। এই রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কোনো বাড়িতে একজন আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যদেরও পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে।

আইসিডিডিআরবির ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের প্রধান সায়েরা বানু বলেন, অন্যান্য রোগের তুলনায় যক্ষ্মায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এটি যে একটি বড় সমস্যা, তা নিয়ে এখনো অনেকেই জানেন না বা সচেতন নন। ফুসফুস ছাড়া শরীরের (চুল ও নখ ছাড়া) অন্যান্য অঙ্গেও যক্ষ্মা হতে পারে।

ইউএসএআইডি বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ (যক্ষ্মা) সরদার মুনিম ইবনে মহসিন বলেন, যক্ষ্মা নিরাময়যোগ্য রোগ। এ রোগ নির্মূলে ইউএসএআইডি যক্ষ্মার পরীক্ষা ও যথাযথ চিকিৎসার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথম আলো বিশাল একটি প্ল্যাটফর্ম। এ রোগের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। আর এসব শিক্ষার্থীই একসময় স্বাস্থ্য দূত হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবে।

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড পরিচালনায় বন্ধুসভার সদস্যদের পাশাপাশি কিশোর আলোর সদস্যদেরও যুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যক্ষ্মার যে পরিসংখ্যান, তা সবাইকে বিচলিত করছে। প্রথম আলো এ ধরনের একটি কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে জাতীয় দায়িত্ব পালন করছে।

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ক্রমান্বয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সরকারের বাজেট কমে যাচ্ছে, যা দুঃখজনক। যক্ষ্মা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে প্রথম আলো পত্রিকা ও অনলাইন দেশের বড়সংখ্যক মানুষের কাছে এ–সংক্রান্ত বার্তা পৌঁছাতে পারবে। এতে করে অবশ্যই সুফল পাওয়া যাবে। তিনি দেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোকে এ প্রচারে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের নানা তথ্য: অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান মুনির হাসান। তিনি জানান, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক লাইভ, পোস্ট, টিবি স্পটলাইট প্রচারসহ বিভিন্ন

প্রচার চলছে। স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড রাজশাহী বিভাগের ৮টি, রংপুর বিভাগের ৪টিসহ মোট ১২টি জেলায় অনুষ্ঠিত হবে। জেলাগুলো হচ্ছে রাজশাহী, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম। ১২টি জেলার ৪৮টি স্কুলে প্রচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডে তিনটি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে। প্রাইমারিতে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম এবং সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা (সমমানের জন্য প্রযোজ্য) অংশ নেবে। স্বাস্থ্য ও যক্ষ্মাবিষয়ক কুইজে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে দেয়ালিকা তৈরি করবে। এ দুই বিভাগে বিজয়ীরা ঢাকায় এসে জাতীয় অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে। বিজয়ীরা সবাই সনদ পাবে। বিজয়ীদের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কারও থাকবে।


Share:

0 comments:

Post a Comment

Click here

Blog Archive

NEWS

Recent Posts

Unordered List

Definition List